
এম এ কাইয়ুম চৌধুরী(বিশেষ প্রতিনিধি)খুলনা সুন্দরবন থেকে ফিরেঃ সুন্দরবনের পশ্চিম বন বাইদার খালের দুইপাড় এলাকার সর্বত্রই গোলপাতার ছড়াছড়ি।এখানকার সারি সারি দীর্ঘ গোলপাতা দেখে হয়তো বেমালুম যে কেউ ক্ষনিকের জন্য হলেও মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। তারা মনে মনে ভাববেন এটা যেন গোলপাতার বন।৩ থেকে ৪ বছরের চারা নারিকেল গাছের আকৃতি বিশিষ্ট গোলপাতা গাছ ঝাড় আকারে বিন্যস্ত।অনুরুপভাবে শেখের খাল,টেপারভাড়ানি খালের দুইপাড়সহ বনের প্রায় সব খালের পাড়ে রয়েছে সারি সারি গোলপাতা গাছ।
বন বিভাগ সূত্রে জানাযায়,গোলপাতা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতি। গোলপাতা সুন্দরবনের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ। নামে গোলপাতা হলেও গোলপাতা আসলে গোলাকার নয়।এই পাতা অনেকটা নারিকেল পাতার মত লম্বা লম্বা। এর বর্ণ সবুজ।বহুমুখী ব্যবহার ও সহজলভ্যতার কারণে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রায় ১৬ টি জেলার নিম্ন-মধ্যবিত্ত টরিবারের মানুষ ও তাদের পরিবারের ঘরবাড়ি ও আশ্রয়স্থল নির্মাণে গোলপাতা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সারাধণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস গোলপাতা সংগ্রহের কাজ চলে।প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মেঃ টন গোলপাতা সংগৃহীত হয়।এ কাজে প্রতিবছর গোলপাতা সংগ্রহ মৌসুমে ৩০ হাজার লোক নিয়োজিত থাকে।সুন্দরবন থেকে যারা গোলপাতা সংগ্রহ করে তাদেরকে বাওয়ালি নামে ডাকা হয়।যদিও বাঘের কারণে গোলপাতা সংগ্রহ করা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তথাপিও জীবন ও জীবিকার তাগিদে এত অধিক সংখ্যক লোক এ পেশায় নিয়োজিত থাকে। এছাড়া নদী পথে গোলপাতা পরিবহনে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার নৌকা ব্যবহৃত হয়।গোলপাতা ছাউনি ছাড়াও রান্নার জ্বালানি হিসেবে ধরাতে শুকনা গোলপাতা ব্যবহার করা হয়।পাতার পাটা জ্বালানি, বেড়া নির্মাণ কিংবা মাছ ধরার জন্য তৈরিকৃত আশ্রয়স্থলের গোলপাতার ডাঁটা ও পাতা উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া পাতার ডাঁটা মাছ ধরার সময় জালকে ভাসিয়ে রাখার কাজে জেলেরা ব্যবহার করে থাকে।এছাড়া গোলপাতার সাহায্যে ছাতা,সানহ্যাট, রেইনকোর্ট, ঝুড়ি, মাদুর, থলে, খেলনাসহ প্রভৃতি ব্যবহার্য জিনিষপত্র তৈরি করা হয়।গোলফল অনেকটা ডালের মত।কচি ফলের শাঁস খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।এই শাঁস খেতে অনেক সুস্বাদু। গাছের মাথি বা মগজ বিশেষভাবে রান্না করে সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা যায়।গোলগাছের মুঞ্জরি হতে রস সংগ্রহ করা যায়।এই রসে শর্করার পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৮ শতাংশ।যা চিনি তৈরিতে ও টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তাছাড়া রস হতে ভিনিগার তৈরি হয়।
নালিয়ান এলাকার বাওয়ালি আবুল বাশার জাগ্রত জনতা ২৪ ডটকম ও পাক্ষিক কৃষি বিপ্লব কে জানান,বন বিভাগের পাশ ও পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে গোলপাতা কাটতে যেততে হয়।এখন জলদস্যদের মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজদের চাঁদা এসব আগের মত না থাকলেও বনে বাঘের ভয় তো রয়েই গেছে। গোলপাতার ঝাড়ের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এসে লুকিয়ে থাকে।তারপরও জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই গোলপাতা কাটতে যেতে হয়।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বশিরুল -আল -মামুন এ প্রতিবেদক কে জানান,২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৬৩ দশমিক ৪৬ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা আহরণ হয়েছে।সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন,বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৪৫ হাজার ৫শ' কুইন্টাল গোলপাাতা আহরিত হয়েছিল।এতে ওই সময় রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯ টাকা।২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ২৯ হাজার ৩ হাজার ৭৯ কুইন্টাল গোলপাতা আহরিত হয়।যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭শ' ৬৭ টাকা।২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ২২ হাজার ৪ শ' ৫৪ কুইন্টাল গোলপাতা আহরণ করা হয়েছে।এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৯শ' ৭ টাকা।
সুন্দরবনে টহলরত অবস্থায় পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের স্মার্ট প্যাট্রোল টিমের লিডার সুলতান মাহমুদ টিটু বলেন, সুন্দরবনের প্রায় সর্বত্রই গোলপাতা জন্মে থাকে।তবে,নদী ও খালের পাড়ে এবং নতুন চরে অধিক পরিমানে গোলপাতা জন্মে। তুলণামূলকভাবে কম দাম, শক্ত ও অধিক টেকসই হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরণের ঘরের কাজে " গরিবের ঢেউটিন " হিসেবে খ্যাত সুন্দরবনের গোলপাতা।
প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত হয় ৮০ হাজার মেঃ টন গোলপাতা
Reviewed by স্বাধীন খবর
on
6:05 AM
Rating:
Reviewed by স্বাধীন খবর
on
6:05 AM
Rating:
No comments: