এম এ কাইয়ুম চৌধুরী,মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতাঃবাংলাদেশের বস্ত্র চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিত যে সম্প্রদায় সেই তাঁতি সম্প্রদায় অস্তিত্ব রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। অষ্টাদশ শতকে তাদের তৈরি তাঁতের কাপড় সারা বিশ্ব মাতিয়েছিল। কথিত আছে, এই তাঁতিদের হাতে তৈরি ঢাকাইয়া মুসলিম যেমন জগৎবিখ্যাত ছিল, তেমনই গুণে মানে নৈপুণ্য সমৃদ্ধ ছিল তাঁতবস্ত্র।তাঁতিদের তাঁতে তৈরি মসলিন এমনই নৈপূন্যে ভরপুর ছিল যে,একটা পুরো মসলিন শাঁড়ি একটা ম্যাচের ভিতরে ভরা যেত।সেই তাঁতিরা আজ পেশা ছেড়ে দিনমজুরে পরিণত হয়েছে।তবে কয়েকটি জেলার তাঁতিরা এখনো সমৃদ্ধির সোপানে নড়াচড়া করে বেড়াচ্ছে। তারা হলো-খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, কুমারখালী,পাবনা, ঝালকাঠি,সিরাজগঞ্জ,ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ,বাবুবাজার কেরানীগঞ্জ, টেকেরহাটসহ বেশ কয়েকটি জেলার তাঁতিরা।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমাদের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশই তাঁতি জনগোষ্ঠী যা যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জেলায় জনপদে।কিন্তু এদের মধ্যে ৯৮ ভাগই পেশাচ্যুত।আজ তাদের তাঁতি বলে চেনা যায় না। এমনই অবস্থা মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলার তাঁতি পরিবারগুলোর।
সূত্র জানায়,মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলার ৬৫ ইউনিয়নে প্রায় ৫৩ হাজার তাঁতি পরিবার রয়েছে। এদের অধিকাংশই পেশাহারা। হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে যাদের অবস্থান শিবালয় উপজেলার- রুপসা ও শাকরাইল এবং হরিরাম পুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর,আন্দার মানিক, চালা,গালা,বাল্লা,ঝিটকা,লেছড়া গঞ্জ ও কাঞ্চন পুর ইউনিয়নে। যাদের সংখ্যা মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টি পরিবার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বস্ত্র উৎপাদনে যে উপকরণগুলোর প্রয়োজন তার মূল্য কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ সালে এক বান্ডিল সূতার মূল্য ৩৫ টকা থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল।যার বর্তমান বাজার মূল্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা।রঙ ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য অনুরুপভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।তারপর, উপকরণ প্রাপ্তিতে বড় বাঁধা হলো অধিকাংশ সুতার তৈরির মিল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বন্ধ মিলগুলো সরকার ভুর্তকি দিয়ে চালু করলে উৎপাদিত সুতার মাধ্যমে তাঁতি পরিবারগুলো আবার স্ব স্ব পেশায় ফিরে যেতে উজ্জীবিত হতো।আবার প্রতিবেশী দেশ থেকে কম দামে কালোবাজারে বস্ত্র অনুপ্রবেশের কারণে দেশি তাঁত শিল্প আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাঙ্গাইলের শাড়ির জন্য গৃহবধুরা এখনও পাগলপ্রায়।আর এ কারণেই এখন পর্যন্ত তাঁতের কদর যে অব্যাহত রয়েছে সেটা অনুমান করা যায়।তাই তাঁতি সম্প্রদায় কে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। ভর্তুকি দিয়ে তুলা চাষ করাতে হবে।আমদানি করতে হবে তুলা, প্রতিষ্ঠা করতে হবে তাঁত ব্যাংক ও তাঁতীবাজার। সুদ মুক্ত পর্যাপ্ত মূলধন প্রকৃত তাঁতীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে জাতির মৌলিক চাহিদার দ্বিতীয় খাতটি সমৃদ্ধ হবে । টিকে থাকবে তাঁত ও তাঁতি জনগোষ্ঠী।
মানিকগঞ্জের তাঁঁতি পরিবারের ৫৩ হাজার লোকজনের অধিকাংশই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে
Reviewed by স্বাধীন খবর
on
6:20 AM
Rating:
No comments: