মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতাঃআধুনিকতার স্পর্শে দেশ হতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার মাটির ঘর। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল বাংলার ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় হিসেবে খ্যাত গরীবের বেহেশতখানা নামে পরিচিত মাটির ঘর এখন বিলুপ্ত হতে বসেছে। আগেকার দিনে গ্রামে নজর পড়তো মাটির বাড়ি।ঝড়-বৃষ্টি হতে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এসব বাড়ি এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না।এক সময় দেশের প্রতিটি জেলার শহর হতে গ্রামাঞ্চলে এলাকাগুলোতেও কম বেশি দু-একটি মাটির ঘর ছিল। এখন আধুনিকতার স্পর্শ আর কালের বিবর্তনে দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে আজ যে জিনিসটি এই সুন্দর পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করছে, কালের বিবর্তনে দিন দিন আধুনিক জিনিসপত্র আবিষ্কার হওয়ার কারণে কাল তার স্থান হচ্ছে যাদুঘরে।ধ্বংস আর সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তন। এ নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়সহ অনেক সাহিত্যিক। বেশী দিন আগের কথা নয়, ষাটের দশকের শেষের দিকেও গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে মাটির ঘরের যথেষ্ট কদর ছিল।অত্যান্ত আরামদায়ক আবাস এই মাটির ঘর শুধু গরীব মানুষের নয় সমাজের বিত্তবান কিংবা উচ্চবর্গের লোকজনও পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করত। এখন মাটির ঘর ভেঙ্গে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের তৈরি পাকা দালান। মাটির ঘরগুলো গরমে শীতল আর শীতে ছিল উষ্ণ। মাটির ঘরগুলো বর্তমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের মত। দেশের বিভিন্ন উপজেলা এক সময় মাটির ঘরের গ্রাম হিসেবে খ্যাত ছিল। মাটির ঘর কারিগর মোঃ হাসমত আলী জানান, খুব সহজেই তৈরি করা যেত এই মাটির ঘর। এই ঘর তৈরি করতে লাগত এঁটেল-দো-আঁশ মাটি। ঘর তৈরির জন্য তেমন কোন খরচ হতো না। কৃষাণ-কৃষাণী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা মিলেই অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঘর তৈরি করে নিত। যে মাটি দিয়ে ঘর তৈরি করা হতো সেই মাটিকে কোঁদাল দিয়ে ভাল করে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে নেওয়া হতো। তারপর তার সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাদা করে নেওয়া হতো। মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। তারপর সেই সেই মাটি দিয়েই তৈরি করা হতো মাটির ঘর। অল্প অল্প করে ৬ ফুট থেকে ৭ ফুট উচ্চতার পূর্ণাঙ্গ ঘর করতে সময় লাহতো মাস খানেক। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগত। কারণ একসাথে বেশি উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা যায় না।প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকানো হয়। তারপর সেই দেয়ালের ওপর বাঁশের চাল তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে ৩ -৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগতো। মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক। তবে বন্যা, ভূমিকম্প, বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেক সময় মাটির ঘর দোতলা পর্যন্ত করা হয়। এ সমস্ত ঘর বেশি বড় হয় না।
এদিকে দেশে একনো কাঁচা ঘরের সংখ্যা ২০ দশমিক ০৯ মিলিয়ন বা দুই কোটিরও বেশি। অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ ঘর এখনো কাঁচা। চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ( বিবিএস ) মিলনায়তনে সার্ভে অন অকুপাইড রেসিডেন্সিয়াল হাউজ আ্যান্ড রিয়াল ইস্টেট সার্ভিসেস-২০১৮ এর প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন করা হয়।এ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী এবং বিবিএস মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন প্রমূখ।
কাষ্টসাগড়া আইসিএম ক্লাবের উপদেষ্টা ড. মোঃ আমিনুর রহমান জানান, মাটির ঘর আরামদায়ক হলেও ঝড়, বৃষ্টি, ভারী বর্ষণ, ভূমিকম্প কিংবা নানারুপ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লোকজন মাটির ঘর তৈরি বদলে ইটের তৈরি পাকা দালান তৈরিতে ঝুকছেন। দিন দিন প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ আধুনিক ঘর বাড়ি তৈরির দিকে মনোনিবেশ করায় দিনে দিনে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির ঘর। কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হওয়া মাটির ঘর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখা তো দুরের কথা এর নামও জানতে পারবে না ।
আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার মাটির ঘর
Reviewed by All in one একের ভিতর সব
on
3:54 AM
Rating:
Reviewed by All in one একের ভিতর সব
on
3:54 AM
Rating:

No comments: