এম এ কাইয়ুম চৌধুরী, মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতাঃ ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দুই মাস পর পরই আমাদের দেশে ঋতু পরিবর্তন হয়। এই ঋতু পরিবর্তনে এখন বইছে শরৎকাল। আর প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশঁফুলই জানিয়ে দেয শরতের আগমনী বার্তা। শরতের বিকেলে নীল আকাশের নিচে দেখায় শুভ্র কাঁশফুল।হাওড় ও নদী বেষ্টিত মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন খালের পাসাদা হইয়াছে কাঁশফুলে। নাগরিক কোলাহল আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে চুপি চুপি আসে শরৎ।মাতোয়ারা করে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায়,কাঁশফুলের শুভ্রতায় কিংবা শরীর ঘ্রাণে।তারপর হারিয়ে যায় দ্রুতই।শরৎ আসলে এমনই স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে স্মৃতিতে দোলা দেয় সব ঋতুতে।তবে এখনো কাশফুল দেখা যায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলে।গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাঁশবন। ঋতু অনুসারে ভাদ্র-আশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব।নিকট অতীতেও দেখা গেছে শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপঝাড়, রাস্তাঘাট,ও নদীর দু'ধার সহ আনাচে-কানাচে কাঁশফুলের মনমাতানো নাচানাচি।সেগুলো আর চোখে পড়ছে না। কাঁশবনের ফুলগুলো দোল খেত একটার সঙ্গে আরেকটা।এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো।কবি জীবনানন্দ দাশ শরৎ কে দেখেছেন,''বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা আর।"শরতের এই অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই প্রকৃতি,শরৎ মানেই নদীর তীরে কাঁশফুরের সাদা হাসি।তবে এবার একটু দেরীতেই কাঁশফুল ফুটতে দেখা যায়। বাংলার প্রকৃতিতে শরতের এই দৃশ্য দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হয়ে যায়।জানা যায়, প্রাচীন কাল থেকেই এদেশের মাঠে-ঘাটে কাঁশফুল ফুটতে দেখা যায়।এমনকি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এদেশে কাঁশফুল ছিল।বাংলাদেশের সব অঞ্চলের নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোন উঁচু জায়গায় কাঁশের ঝাড় বেড়ে ওঠে।কাশফুল ঘাস জাতীয় জলজ উদ্ভিদ।চিরল পাতার দুধারে খুবই ধার। পালকের মত নরম এর সাদা ফুল।কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ "পুরাণ" এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন গ্রন্থ "কুশজাতক" কাহিনী অবলম্বন করে "শাপমোচন " নৃত্য নাটক রচনা করেছেন।কাঁশফুল মনের কালিমা দূর করে। শুভ্রতা অর্থে ভয় দূর করে শান্তির বারতা বয়ে আনে। শুভ কাজে ব্যবহার করা হয় কাশফুলের পাতা বা ফুল। নদীর দুই ধারে,ক্ষেতের আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাঁশবন।এখন গ্রাম বাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাঁশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে।সময়ের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত।পাড়ে গড়ে ওঠা বর্তমান সময়ের আধুনিক শহরগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে শুইয়ে দিচ্ছে সাদা কাফনের ভিতরে।সাধারণ মানুষের বিনোদন প্রকৃতিতে দেখার শখ আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
এ কাঁশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই।আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাঁশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাঁশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাঁশ দিয়ে গ্রামের বধুরা ঝাঁটা, ডালি, দোন তৈরি করে আর কৃষকেরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।মানিকগঞ্জের পদ্মা, যমুনা,ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা পাড়ে কাঁশবনের দেখা মিলে।তখন মানুষ মনের অজান্তেই হারিয়ে যায়। অতীত হাতড়ে থাকে।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরিতে শরতের মায়াময় প্রকৃতি সাজে ভিন্ন ভিন্ন রূপে।মেঘের ঋতু শরৎ শুভ্রতা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। আর এই শুভ্রতা মানুষের মনকে করে পবিত্র ও প্রশান্ত। তাইতো ঋতু বা প্রকৃতির কাছে শুধু চাইলেই হবে না, নগরায়নের প্রভাব থেকে একে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে সমানভাবে।
মানিকগঞ্জ জেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা কাঁশফুল
Reviewed by স্বাধীন খবর
on
6:14 AM
Rating:
Reviewed by স্বাধীন খবর
on
6:14 AM
Rating:


No comments: